January 2, 2025, 7:41 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
মূল্যস্ফীতি সত্যিই মাথাব্যাথার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনিতেই আমদানী ও রফতানীর দুরত্ব বাড়ছে অন্যদিকে সাধারণ মানুষের আয়-ব্যয়ের হিসেব মিলছে না। বাজার দখলে নিয়ে নিয়েছে মধ্যসত্বপুঁজির এক বিরাট চক্র। এর মাঝেও সরকার যে কোনও মূল্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। সরকারের চিন্তা মূল্যস্ফীতির হার যেন কোনোভাবেই ৬ দশমিক ৫ শতাংশের উপরে না ওঠে।
এমনিতেই নানামুখী চাপে রয়েছে সরকার। এই অবস্থার সাথে পাল্লা দিয়ে যোগ হয়েছে ইউক্রেন সমস্যা। সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধ সারা বিশ্বের অর্থনীতিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। এতে সারা বিশ্বেই নিত্যপণ্যসহ সকল প্রকার পণ্যের দাম বাড়ছে।
এমতাবস্থায়, সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়ে ভাবছে। ইতোমধ্যে কিছু ঘোষণাও এসেছে। যেগুলি নিয়ে সরকার চিন্তা করছে এগুলোর মধ্যে রয়েছে কর্মসৃজন, প্রণোদনা প্যাকেজ ও খোলাবাজারে বিক্রি (ওএমএস) কার্যক্রম গ্রহণ এবং নিত্যপণ্যে ভর্তুকি।
জানা গেছে, দেশের দারিদ্র্যপীড়িত এলাকা শনাক্ত করে সেসব এলাকায় বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সরকার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, দেশের দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় যদি কর্মসৃজন করা যায়, তাহলে মানুষের আয় বাড়বে। এতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও বাড়বে। ভর্তুকির বিপরীতে মূল্য সমন্বয় করলেও চাপ পড়বে না। এতে মূল্যস্ফীতির চাপ কমবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দেশের যে ৬০টি উপজেলায় দারিদ্র্যের হার ৩০ শতাংশের ওপরে, সেসব অঞ্চলে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণের কথা ভাবছে সরকারের নীতিনির্ধারকরা। অতিদারিদ্র্যপ্রবণ এসব অঞ্চলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসৃজন করবে এমন একটি লক্ষ্যভিত্তিক প্রণোদনা প্যাকেজ গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ বা তার বেশি হলে সারা দেশে সীমিত সময়ের জন্য ওএমএস কর্মসূচি চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের।
অপরদিকে দারিদ্র্যপীড়িত সীমিত এলাকার সাধারণ মানুষের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে নিত্যপণ্য সরবরাহ করা হলে সেক্ষেত্রেও মূল্যস্ফীতির চাপ কম থাকবে। একই কারণে এসব এলাকায় সরকারের ওএমএস কার্যক্রম পরিচালনার কথাও ভাবা হচ্ছে। এতে একদিকে ভর্তুকির পরিমাণ কমবে, ফলে মূল্য সমন্বয় না করলেও হয়তো চলবে। করলেও চাপ কম থাকবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
সব জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের কষ্টের কথা ভেবে বিভিন্ন নিত্যপণ্যে ভর্তুকি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিন্তু কতক্ষণ? ভর্তুকির লাগাম টানতে মূল্য সমন্বয় করার কথাও ভাবা হচ্ছে। তবে এ ভর্তুকির লাগাম টানতে মূল্য সমন্বয় করা হলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
নতুন অর্থবছরে ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে ৭২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে, যা চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ৫৪ শতাংশ ও সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি। এলএনজি, বিদ্যুৎ ও কৃষি খাতে ভর্তুকির পরিমাণ ৪৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকায় দাঁড়াবে বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
এই মুহূর্তে ভর্তুকি প্রত্যাহার করা হলে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ৯ শতাংশে উন্নীত হওয়ার আশঙ্কা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
এছাড়া, শ্রীলঙ্কাসহ পাকিস্তান ও নেপালের অর্থনৈতিক সংকট মাথায় রেখে নতুন অর্থবছরে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন ঘটিয়ে রপ্তানি প্রতিযোগিতা আরও বাড়ানো এবং আমদানি নিরুৎসাহিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য বা সেবার দাম বাড়লে দেশেও দাম বাড়ানো হয়। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে এসব পণ্যের দাম ক্ষেত্রবিশেষে দ্বিগুণ হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে চলতি বাজেটে এসব ক্ষেত্রে যে পরিমাণ ভর্তুকি রাখা হয়েছে, তা কয়েক গুণ বেড়ে যেতে পারে। এতে বাজেট ব্যবস্থাপনা জটিল হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। এছাড়া আর্থিক খাত একটি বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়তে পারে।
জানা গেছে, চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে বেড়ে যাওয়া জ্বালানি তেল, সার, গ্যাসের বর্ধিত মূল্য সমন্বয় করতে হচ্ছে সরকারকে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগামী বছরের জন্য ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে বড় ধরনের বরাদ্দ বাড়াতে হচ্ছে। ফলে উল্লেখিত তিনটি খাতে নতুন বাজেটের ৪৯ শতাংশই ব্যয় হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। টাকার অংকে এটি ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা। আগামী ৯ জুন জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থ বিভাগ এরই মধ্যে বাজেটে রূপরেখা প্রণয়ন করেছে। যা সম্প্রতি বাজেট ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ কমিটির সভায় চূড়ান্ত হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বর্তমানে ৫৩ শতাংশ সেচ কাজে ডিজেল ব্যবহার করা হয়। যার দাম এরই মধ্যে বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া ৪৭ শতাংশ সেচ কাজে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়। যার দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়লে কৃষকরা ব্যাপক চাপে পড়বেন। যা জনজীবনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এতে বাড়বে মূল্যস্ফীতি। তাই শুধু কৃষকদের জন্য একটি পৃথক লক্ষ্যভিত্তিক প্রণোদনা প্যাকেজ গ্রহণ করার কথা ভাবছে সরকার।
Leave a Reply